শুধু ছানামুখীই নয়, তোজ রুটিও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য।======================== বিশ্বের আলোর টিভি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া========================ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ছানামুখী। দুধের ছানা দিয়ে তৈরি এক ধরনের মুখরোচক মিষ্টি।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী এ খাবারের পরিচিতি ছাড়িয়ে গেছে দেশের গণ্ডি। প্রায় শতবছর আগে মহাদেব পাঁড়ে নামে এক ব্যক্তি এ মিষ্টির প্রচলন করেন।এ খাবারটির সুনাম বৃটিশ রাজত্বকালে উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ছানামুখী।তবে শুধু ছানামুখীই নয়, এ জেলায় আরও একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে, নাম তোজ রুটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি বিশেষ এ রুটি সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। ঈদ মৌসুমে ঘরে ঘরে মুখরোচক তোজ রুটি তৈরি করা হয়। গরু, মহিষ ও খাসির মাংসের তরকারির সঙ্গে তোজ রুটি পরিবেশন করা হয়। গৃহিণীরা জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে পরিবারের সব নারী সদস্য মিলে চালের গুঁড়ি দিয়ে এ তোজ রুটি বানিয়ে থাকেন। কীভাবে এ তোজ তৈরি করা হয়, তা সম্পর্কে তারা জানান, প্রথমে চালের গুঁড়ি হালকা পানিতে ভিজিয়ে নরম করা হয়। কিছুক্ষণ পর মাখানো চালের গুঁড়ি ছোট ছোট বলের মতো গোল করা হয়। এরপর বেলুন দিয়ে বেলে সেগুলোকে রুটি বানানো হয়। সেই রুটি কয়েকদিন রোদে শুকানো হয়। এতে রুটিগুলো শুকিয়ে অনেকটা পাঁপড়ের মতো হয়ে যায়। এ অবস্থায় রুটিগুলো সংরক্ষণ করা হয়। খাওয়ার আগে শুকনো রুটিগুলোকে কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর তিন/চারটি ভেজা রুটি একসঙ্গে কলাপাতায় মুড়িয়ে তাওয়া/ফ্রাইপ্যানে ছেঁকে নেওয়া হয়। কলাপাতা না থাকলে এমনিতেও ছেঁকে নেওয়া যায়। ব্যাস তৈরি হয়ে গেলো তোজ/ভেজা রুটি।শহরের কালাইশ্রীপাড়ার গৃহিণী আয়েশা সিদ্দিকা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছর কুরবানির ঈদ ঘিরে তোজ রুটি বানানোর পরিকল্পনা করে থাকি। ঈদের তিন থেকে চারদিন আগে চাল ভাঙিয়ে গুঁড়ি করা হয়। মূলত ঈদের পরদিন থেকে তোজ রুটি তৈরি করে পরিবারের সবাই মিলে খাওয়া হয়। মাংসের সঙ্গে খেতে খুবই মজাদার। নবীনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের গৃহিণী মরিয়ম বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সিদ্ধ আতপ চালের গুঁড়ি দিয়ে শতাধিক রুটি তৈরি করি। একদিন পর রুটিগুলো শক্ত হলে পরে চার/পাঁচটা করে রুটি পানিতে ভিজিয়ে নরম করে মাটির তাওয়ায় ছেঁকে নেওয়া হয়। মূলত মাংসের সঙ্গে পরিবেশন করা হয় তোজ রুটি। কুরবানি ঈদ উপলক্ষে পরিবার ছাড়াও আত্মীয়স্বজনের জন্য তোজ রুটি বানানো হয়। শহরের পশ্চিম মেড্ডা মৌবাগ এলাকার গৃহিণী মুক্তা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের পরদিন থেকে টানা এক সপ্তাহ ধরে আমাদের ঘরে তোজ রুটি খাওয়া হয়ে থাকে। মূলত এ রুটি সব সময় খাওয়া হয় না। ঈদের সময় মূলত এ তোজ রুটি তৈরি করা হয়। নিমন্ত্রণে আত্মীয়স্বজনরা বাড়িতে এলে তোজ রুটি আর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। ঈদ বা যে কোনো উৎসব-অনুষ্ঠানে এ জেলায় মেহমানদারির অনন্য উপকরণ তোজ রুটি।